হজ্বের মিকাত ও ইহরাম!

শাইখ ছাঈদ কোদালাভী

ইহরাম বাঁধার স্থানকে মিকাত বলে। হজ বা উমরাহ পালনকারীর জন্য বিনা ইহরামে মীকাত অতিক্রম করা জায়েয নয়।

মীকাত পাঁচটিঃ
১. যুল হুলাইফা- মদিনাবাসী এবং এ পথে যারা আসবে তাদের মিকাত। এটা মদিনা থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এবং মক্কা থেকে ৪৫০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত।

২. জুহফা- এটা সিরিয়াবাসী ও মিসরবাসীদের মিকাত। এ পথে যারা আসবে তাদেরও মিকাত এটা। এটা মক্কা থেকে ১৮৩ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। এখন এর কাছে রাবেগ নামক স্থান থেকে ইহরাম বাঁধা হয়।

৩. জাতু ইরক- এটা ইরাকবাসীদের মিকাত। এটা মক্কা থেকে ৯৪ কিলোমিটার সোজা উত্তরে অবস্থিত।

৪. কারনুল মানাজিল বা আসসায়েল কাবির- এটা নাজদবাসীদের মিকাত। এটা মক্কা থেকে ৭৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে তায়েফে অবস্থিত।

৫. ইয়ালামলাম- এটা ইয়ামেনবাসী ও পাক-ভারত উপমহাদেশের লোকদের মিকাত, যা মক্কা থেকে ৯২ কিলোমিটার সোজা দক্ষিণে। এর কাছে আস-সাদিয়াহ নামক জায়গা থেকে ইহরাম বাঁধতে হয়। মক্কা থেকে জেদ্দা ৭৩ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং নিকটবর্তী ইয়ালামলাম মিকাতের মধ্যে। তাই এখানকার অধিবাসীরা এখান থেকে ইহরাম বাঁধবেন।

যারা মিকাতের অভ্যন্তরীণ এলাকায় বাস করেন তারা নিজ নিজ স্থান থেকে ইহরাম বাঁধবেন। একইভাবে মক্কাবাসীরা মক্কা থেকে হজের ইহরাম বাঁধবেন (বুখারি ও মুসলিম)।
আর উমরাহর জন্য হারাম এলাকার বাইরে যাবেন এবং সেখান থেকে উমরাহর ইহরাম বাঁধবেন। মক্কা থেকে ছয় কিলোমিটার উত্তরে তানঈম এলাকা। বিদায় হজের সময় রাসূল সা: উমরাহর ইহরাম বাঁধার জন্য আয়েশা রা:কে তার ভাই আবদুুর রহমানের সাথে এখানে পাঠিয়েছিলেন (বুখারি ও মুসলিম)।

যদি কেউ ভুলক্রমে মিকাত অতিক্রম করেন ও অন্য জায়গায় ইহরাম বাঁধেন তাহলে তিনি মাফ পাবেন। তবে অলসতা করে মিকাতে ইহরাম না বাঁধলে একটি বকরি কোরবানি করতে হবে। মক্কায় গিয়ে জবেহ করে ফকির-মিসকিনের মধ্যে গোশত বিতরণ করতে হবে। ইচ্ছা করে মিকাত অতিক্রম করলে তাকে মিকাতে ফিরে এসে ইহরাম বাঁধতে হবে। আবার বিমানে কোনো সঙ্কেতের ব্যবস্থা না থাকলে বিমানে ওঠার আগেই ইহরাম বাঁধা যাবে। যদি কেউ অন্য কাজে মক্কায় এসে থাকেন এরপর হজ বা উমরাহ করতে চান তাহলে তিনি তানঈম এলাকায় গিয়ে ইহরাম বাঁধবেন।

ইহরাম: ইহরামের আগে অজু বা গোসল করা উত্তম। মহিলারা নাপাক অবস্থাতেও ইহরাম বাঁধতে পারবে। দেহে সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবে, পোশাকে নয়। পুরুষেরা সাদা সেলাইবিহীন লুঙ্গি ও চাদর পরিধান করবে। মহিলাদের জন্য যেকোনো শালীন পোশাক পরিধান করলেই চলবে, তবে পুরুষের মতো পোশাক হলে হবে না। যেকোনো ফরজ নামাজের পর বা তাহইয়াতুল অজুর দুই রাকাত নামাজের পর ইহরাম বাঁধা যাবে। ইহরাম বাঁধার সাথে নামাজের কোনো সম্পর্ক নেই (আহকামুল হজ)।
ইহরাম বাঁধার পর থেকে মসজিদে হারামে পৌছা পর্যন্ত পুরুষেরা সরবে আর মহিলারা নীরবে তালবিয়া পাঠ করবে। তালবিয়া-
‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।’
অর্থ : আমি হাজির হে আল্লাহ! আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি উপস্থিত, আপনার কোনো শরিক নেই। আমি হাজির আপনার ডাকে, নিশ্চয়ই সব প্রশংসা ও অবদান আপনারই এবং সব রাজত্ব ও আধিপত্য আপনারই আর আপনার কোনো শরিক নেই।

ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ: সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না। মাথার চুল কাটা, শরীরের যেকোনো স্থানের পশম কাটা যাবে না। নখ কাটা যাবে না। পশুপাখি বা যেকোনো প্রাণী শিকার করা যাবে না, এমনকি শিকার করতে ইশারা দেয়া যাবে না। তবে ক্ষতিকর জীবজন্তু মারা যাবে (বুখারি ও মুসলিম)।
যাবতীয় যৌনাচার, বিবাহের প্রস্তাব, বিবাহের আকদ বা যৌন আলোচনা করা যাবে না। পুরুষের জন্য পাগড়ি, টুপি ও রুমাল ব্যবহার করা যাবে না। তবে প্রবল প্রয়োজনে ছাতা ব্যবহার করা যাবে। পুরুষেরা সেলাই করা কাপড় পরতে পারবে না। মোজাও পরবে না। মহিলারা মাথা ঢেকে রাখবে তবে মুখমণ্ডল স্পর্শ করে এমন কাপড় পরবে না। পরপুরুষ থেকে অবশ্যই চেহারা ঢেকে রাখবে। ঝগড়া-বিবাদ করবে না। শরিয়তবিরোধী কথা বলা বা কাজ করবে না।

শুধু যৌনমিলনের ফলে ইহরাম বাতিল হবে। হজের বাকি সব কাজ করবে। পরের বছর হজ করবে। উট কোরবানি করবে ও মক্কার মিসকিনদের খাওয়াবে।

প্রথম হালালের পরে (১০ তারিখ পাথর মারা, কোরবানি করা ও চুল ছোট করার পর) মিলন হলে হজ বাতিল হবে না এবং উটের পরিবর্তে ছাগল কোরবানি করতে হবে। উমরাহর ক্ষেত্রে উমরাহ বাতিল হবে, উমরাহর বাকি কাজ করবে, পরের বছর উমরাহ করবে, ছাগল কোরবানি করে মক্কার মিসকিনদের খাওয়াবে।

চুল কাটার আগে মিলন ঘটলে উমরাহ বাতিল হবে না, ছাগল ফিদইয়া দেবে। অন্য সবের জন্য ফিদইয়া দিতে হবে। একটি বকরি কোরবানি করবে বা ছয়জন মিসকিনকে খাওয়াবে বা তিন দিন রোজা পালন করবে। যদি কেউ ভুলে বা অজ্ঞতাবশে বা বাধ্যগত কারণে বা ঘুমে করে ফেলে তাহলে গুনাহ নেই বা ফিদইয়া নেই।

বিমানে প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টায় জেদ্দা যাওয়া যায়। মিকাত থেকে ইহরাম বেঁধে নিতে হবে। তামাত্তু করলে উমরাহর জন্য দোয়া পড়ুনঃ
‘লাব্বাইকা উমরাতান’। এরপর তালবিয়া পড়ন।

কিরান হজ করলে বলুনঃ
‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা উমরাতান ওয়া হাজ্জান’।

ইফরাদ হজ করলে পড়ুনঃ
‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা হাজ্জান’।

হজের মধ্যে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে বলুনঃ
‘ইন হাবাসানি হা-বিসুন ফা মাহাল্লি হায়ছু হাবাসতানি’।
অর্থ: যদি আমি কোনো বাধার সম্মুখীন হই তাহলে (আল্লাহ) যেখানেই আমাকে বাধাগ্রস্ত করবেন সেটাই আমার (হালাল হওয়ার স্থান)।

বদলি হজ করলে বলুন ‘লাব্বাইকা’। এরপর যার নামে হজ্ব করবেন তার নাম বলুন।
নাবালেগ ছেলে বা মেয়ে থাকলে তাদের অজু করিয়ে ইহরাম বাঁধার জন্য বলুন। তাদের জন্য দোয়া করুন। তালবিয়া ভুলে গেলে ক্ষমা চেয়ে তালবিয়া পড়া শুরু করুন।

উল্লেখ্য, যেসব হজ্বের নিয়ম কানুন আপনার জানা নেই তা মুআল্লীম বা কোন বিজ্ঞ আলেম হতে জেনে নিন।
বা আমাদের "রেডিও সুন্নাহ'তে প্রশ্ন করুন।

চলবে ইনশাআল্লাহ---
শেয়ার করে সকল কে পড়ার সুযোগ দিন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রশ্নপত্র ও রেজাল্ট বাংলা ভাষায় করা হোক!

কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (ইত্তেহাদুল মাদারিস) মারকাজী পরীক্ষা-২০১৯ এর ফল প্রকাশ!

কওমী মাদ্রাসা সনদ স্বীকৃতি প্রসঙ্গঃ